মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ ইরাকের ঐতিহাসিক নৃশংতার শিকার হওয়ার ১৮ বছর পূর্ণ হলো গত ১৯ মার্চ। এই দীর্ঘ আঠারো বছরের কালো ইতিহাস তৈরি হয়েছে দশ লক্ষ শহিদ ও তার দ্বিগুণ বিকলাঙ্গের রক্ত ও আর্তনাদের মাধ্যমে। যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে মার্কিনিরা আঠারো বছর আগে একটি সমৃদ্ধ দেশকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা কতটা সফল এবং কার্যকর হয়েছে বিশ্ব মানবতাকে আজ খতিয়ে দেখতে হবে।
.ইরাকে শান্তি ফিরবে কবে?
.২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সম্প্রসারণবাদী সাদ্দাম হোসেনকে হটিয়ে নতুন গণতান্ত্রিক পুতুল হরকার বসানোর মাধ্যমে ইরানে প্রভাব বিস্তার করা। কিন্ত যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধপরবর্তী মার্কিন হঠকারী সিদ্ধান্ত ইরানের জন্য শাপে বর হয়ে দাড়িয়েছে। সাদ্দাম হোসেন ইরানের যোগ্য প্রতিপক্ষ হিসেবে আরব বিশ্ব ও পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট ছিলেন বৈকি, কিন্তু তার সম্প্রসারণবাদি নীতি ও সমরাস্ত্র উন্নয়নের বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে আমলে নিয়ে তুলনামূলক আরো যোগ্য ব্যক্তিকে ইরাকের মসনদে বসাতে ইরাকে হামলা চালায় মার্কিন জোট। এই উদ্দেশ্য উপলব্ধি করেই ইরাক হামলায় ইরান যথেষ্ট ভীত এবং সংবেদনশীল ছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল বাগদাদের পর মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পরবর্তী টার্গেট হবে তেহরান। এর প্রক্ষিতেই সাদ্দামের পতনের পর ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স, কুদস ফোর্স ও অভিজাত আইআরজিসির গোয়েন্দা বিভাগ ইরাকে ব্যাপকভাবে তৎপর হয়, যার ফলস্বরূপ আজ ইরাকের সমস্ত রাষ্ট্রীয় সংগঠনে ইরানি মদদপুষ্টদের জয়জয়কার দেখছে বিশ্ব।
.
.
যুদ্ধের মাধ্যমে ইরাকের সমাজ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে তা পুনর্গঠনের দায়িত্ব একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তির হাতে দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে প্রথম ও বড় ভুলটি করে। সাদ্দামের পতনের পর ইরাকে 'ভাইসরয়' নিয়োগ করা হয় হেনরি কিসিঞ্জারের অনুজ ডানপন্থী লেফেটেনেন্ট পল ব্রেমারকে, যিনি কূটনীতিবিদ হলেও মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে কখনো এর আগে আসেননি এবং ইরাকি রাজনীতি সম্পর্কে ছিলেন অনভিজ্ঞ। ফলে তার প্রথম পদক্ষেপ হয়, সাদ্দামের বাথ পার্টিকে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর সাথে তুলনা করে তাদের নির্মূল করা। এই 'ডিবাথিফিকেশন' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইরাকের সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়। এই পদক্ষেপ সম্পর্কে পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী পরলোকগত সাংবাদিক অ্যান্থনি শাদিদ ইরাক যুদ্ধের উপর রচিত তাঁর বই 'Night Draws Near'-এ লিখেছিলেন, "ব্রেমারের এই সিদ্ধান্তের যে ফলাফল ছিল, তা সাড়ে তিন লাখ ইরাকি অফিসার এবং সৈন্যকে রাস্তায় বসিয়ে দেয়। এই লোকগুলোর প্রত্যেকের কিছু না কিছু সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল। ফলে, মুহূর্তের মধ্যে গেরিলা যুদ্ধের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীর এক বিশাল ভাণ্ডার তৈরি হয়ে যায়। (তাদের দখলে এবং নাগালের মধ্যে ছিল প্রায় এক মিলিয়ন টন অস্ত্র এবং সবধরনের গোলাবারুদ।)" সে সময় নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা বলেছিলেন, "সে সপ্তাহেই আমরা ইরাকের মাটিতে সাড়ে চার লাখ নতুন শত্রু সৃষ্টি করেছিলাম।"
যুদ্ধের মাধ্যমে ইরাকের সমাজ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে তা পুনর্গঠনের দায়িত্ব একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তির হাতে দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে প্রথম ও বড় ভুলটি করে। সাদ্দামের পতনের পর ইরাকে 'ভাইসরয়' নিয়োগ করা হয় হেনরি কিসিঞ্জারের অনুজ ডানপন্থী লেফেটেনেন্ট পল ব্রেমারকে, যিনি কূটনীতিবিদ হলেও মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে কখনো এর আগে আসেননি এবং ইরাকি রাজনীতি সম্পর্কে ছিলেন অনভিজ্ঞ। ফলে তার প্রথম পদক্ষেপ হয়, সাদ্দামের বাথ পার্টিকে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর সাথে তুলনা করে তাদের নির্মূল করা। এই 'ডিবাথিফিকেশন' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইরাকের সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়। এই পদক্ষেপ সম্পর্কে পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী পরলোকগত সাংবাদিক অ্যান্থনি শাদিদ ইরাক যুদ্ধের উপর রচিত তাঁর বই 'Night Draws Near'-এ লিখেছিলেন, "ব্রেমারের এই সিদ্ধান্তের যে ফলাফল ছিল, তা সাড়ে তিন লাখ ইরাকি অফিসার এবং সৈন্যকে রাস্তায় বসিয়ে দেয়। এই লোকগুলোর প্রত্যেকের কিছু না কিছু সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল। ফলে, মুহূর্তের মধ্যে গেরিলা যুদ্ধের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীর এক বিশাল ভাণ্ডার তৈরি হয়ে যায়। (তাদের দখলে এবং নাগালের মধ্যে ছিল প্রায় এক মিলিয়ন টন অস্ত্র এবং সবধরনের গোলাবারুদ।)" সে সময় নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা বলেছিলেন, "সে সপ্তাহেই আমরা ইরাকের মাটিতে সাড়ে চার লাখ নতুন শত্রু সৃষ্টি করেছিলাম।"