গত মাসে তুরষ্ক-সিরিয়ার যুদ্ধ ছিল মধ্যপ্রাচ্যে তুরষ্কের নতুনভাবে আবির্ভাবের একটি ঘটনা।কয়েকদিনের এই যুদ্ধে যে দ্রুততার সাথে তুরষ্ক যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজের অবস্থান মজবুত করে,তা পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়।
তুরষ্কের ব্যাপক আক্রমণ সিরিয়ার বর্তমান কারিগর রাশিয়ার চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়ায়,যা দূর করতে তারা তুরষ্কের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ করে সিরিয়াকে।কিন্তু বর্তমানে চুক্তি অনুযায়ী শর্ত মেনে চলছে না তুরষ্ক,যেসব এলাকায় তুরষ্ককে সামান্য ওয়াচ টাওয়ার বসানো বা পর্যবেক্ষণের অধিকার দেয়া হয়েছে,তার চেয়ে আরো 40-50 মাইল সিরিয়ার অভ্যন্তরের এসে সাঁজায়া যান সহকারে টহল দিচ্ছে তুর্কি সেনারা,যা সম্পূর্ণ চুক্তি বহির্ভূত।এছাড়াও চুক্তির পরদিন থেকে তুরষ্ক ভারী অস্ত্রসহ সেনা প্রবেশ করানো শুরু করেছে সিরিয়ায় যা গত একমাস ধরে চলছে।
এরদোগানের চোখে কিসের নেশা?
বিশ্বের নামকরা সমর বিশেষজ্ঞরা এই যুদ্ধে তুরষ্কের সর্বাধিক ব্যবহৃত আধুনিক ড্রোনের ব্যবহার দেখে অভিভূত হয়ে পড়ে।কারণ এই প্রথম কোন দেশ যুদ্ধে এত বেশি ড্রোন ব্যবহার করে এবং আশ্চর্যজনক ফলাফল ছিনিয়ে আনে।বলা হয়,বিশ্বে ড্রোন উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে তুরষ্ক অন্যতম।তারা এই যুদ্ধে এমন কিছু ড্রোন ব্যবহার করেছে যা খুবই হালকা এবং স্বল্প পাল্লায় রাডার ফাঁকি দিয়ে সফলভাবে হামলা চালিয়ে ফিরে আসতে সক্ষম।এসব ড্রোন সিরিয়ান সেনাবাহীনিকে দেয়া রাশিয়ার রাডার সিস্টেম শনাক্ত করে ধ্বংস করার পূর্বেই হামলা চালিয়ে ফিরে যাওয়ার কারণে শত শত সিরিয়ান সেনা নিহত হয় অল্প কয়েকদিনে।
যুদ্ধে এভাবে ব্যাপকহারে ড্রোন ব্যবহার করে দ্রুত জয় লাভ করার কৌশল দেখে স্বয়ং তুর্কি সমরবিদরা বিস্মিত হয়ে যায়।কারণ তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী ড্রোন তৈরি করেছিলো,তবে এই প্রথম কোন যুদ্ধে তা প্রয়োগ করেছিলো,এবং আশানুরূপ ফল পেলো।
এরপর থেকে অনেক দেশের সামরিক বিশেষজ্ঞরা নিজেদের বাহীনিতে অত্যাধিক ড্রোন ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে সরকারকে।
নিজের নতুন যুদ্ধ কৌশল এভাবে বিশ্বে সাড়া ফেলার পর এরদোগান হয়তো সেই ঐতিহাসিক তুর্কি সম্রাজ্য পুনঃস্থাপনের স্বপ্ন দেখা শুরূ করেছেন•••
![]() |
এরদোগানের চোখে কিসের নেশা |
যুদ্ধ বিধ্বস্ত এবং অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সামলাতে ব্যস্ত সিরিয়ার পক্ষে এসব অবৈধ টহল নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না,যার ফলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা বৃদ্ধি করছে তুরষ্ক।
সিরিয়ার এই নতজানু মনোভাব এরদোগানকে মধ্যপ্রাচ্যের কর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখাচ্ছে এখন।তুরষ্ক হঠাৎ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে,তারা যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে সেনা মোতায়েন করছে,লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে নতুনভাবে সশস্ত্র অঅংশগ্রহণ করছে সেনা পাঠিয়ে।
এদিকে সিরিয়ায় তুরষ্কের চোখ রাঙানি,তুরষ্কের পক্ষ নিয়ে পরাজয়ী মার্কিন বাহীনির মরণ কামড় বসানোর সুযোগের অপেক্ষায় থাকা চাতকে দৃষ্টি সামলে সিরিয়ায় নিজের অবস্থান ধরে রাখতে রাখতে ক্লান্ত রাশিয়া।পুতিন সিরিয়ায় বিলিয়ন ডলার খরচের পর ফল লাভের জন্য এতদিন অপেক্ষায় থাকতে পারছেন না আর।এবার রুশ প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে সুর তুলছেন,এবং মধ্যপ্রাচ্য ও সিরিয়ায় অবস্থানরত অপর দুই শক্তি ইরান ও তূরষ্ককে নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করেছেন।তুরষ্ক,রাশিয়া ও ইরানের এই বোর্ড বর্তমান বিজয়ী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ ছাড়া অন্য কারো মাধ্যমে একটি সরকার বসানোর চিন্তা করছে।
রাশিয়ার এই বোর্ড বসানোর কারণ হলো,প্রথমত নতুন যুদ্ধ সৃষ্টি না করে যুক্তরাষ্ট্রকে ঢোকার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া,দ্বিতীয়ত নতুন সরকার বসিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করে নিজেদের অংশ বুঝে নেয়া।
সূতরাং তুরষ্ক নতুনভাবে সিরিয়ায় আধিপত্য পাওয়া,অপরদিকে ইয়েমেন ও লিবিয়ায় সেনাপাঠিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব সৃষ্টি,সাইপ্রাসের সমুদ্রসীমায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে তেল-গ্যাস সন্ধান,এসবকিছুই যেনো এরদোগানের চোখে তুর্কি সম্রাজ্যের স্বপ্নের প্রমাণ।আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যথেষ্ট কুটকৌশলও খাটাচ্ছেন তিনি।যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে এস-400 অস্ত্র কেনা,আবার মার্কিনিদের পক্ষে সিরিয়ায় কথা বলা এবং করোনা সংকটে ট্রাম্পকে সাহায্য পাঠানো,চীর শত্রু ইসরায়েলের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে লক্ষাধিক করোনা কিটও মেডিসিন পাঠানো,ফিলিস্তিনকে খুশিতে রাখতে তাদেরকেও সমপরিমাণ সাহায্য পাঠানো,সিরিয়ার যুদ্ধে সরাসরি ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিছু না বলে নিজের শক্তি দেখিয়ে তাদের সাথে পূর্ব বন্ধুত্বের অজুহাতে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া,এসবকিছুই যেনো তুখোড় দাবাড়ুর সুক্ষ চালের মতো•••
তবে হয়তো বেশিদিন চলবেনা এই সব পক্ষের হয়ে চাল দেয়ার খেলাটা।আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে এরদোগান যেসব ভুল করছেন,তা নিয়ে আরেকদিন লিখবো বেঁচে থাকলে•••
0 comments:
Post a Comment
Please do not enter any spam link in the comment box.