বিশ্বের সপ্তম দ্রুত উন্নয়নশীল দেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান দৃঢ় করতে ইতোমধ্যেই প্রতিযোগিতায় নেমেছে দুই পরাশক্তি চীন এবং ভারত। বাংলাদেশকে নিয়ে এই কাছে টানার খেলায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান পর্যালোচনা করে কী ধরনের অবস্থান বাংলাদেশ নিচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেমন হতে পারে, তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিশ্লেষকরা আলোচনা শুরু করছেন ইতোমধ্যেই।
বাংলাদেশকে নিয়ে চীন ভারতের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা
প্রভাব বিস্তার মূল উদ্দেশ্য হলেও তা বাস্তবায়েনের পথে চীন এবং ভারতের কৌশল কিছুটা ভিন্ন। ভারত চায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে, কিন্তু চীন অর্থনৈতিক এবং সামরিক, উভয় দিক থেকেই বাংলাদেশকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে চায় এবং তা নিজ স্বার্থেই। অপরদিকে বাংলাদেশও বর্তমান পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখে সামরিক শক্তিবৃদ্ধির জোর তাগিদ অনুভব করে এক্ষেত্রে পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে।
সম্প্রতি চীনের বিভিন্ন সমরাস্ত্র প্রদানের প্রস্তাব, বিশেষ করে নৌবাহিনীর সামরিক পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে সচেষ্ট হয়েছে চীন। লন্ডনভিত্তিক পত্রিকা এশিয়ান লাইভে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত পেশাদার চীনা কূটনীতিক লি জি মিং এর কাজ শুধু নতুন নতুন চীনা কোম্পানিকে নিয়ে আসাই নয়, বরং বাংলাদেশের কক্সবাজারের পেকুয়ায় নির্মিতব্য অত্যাধুনিক সাবমেরিন টার্মিনাল "বিএনএস শেখ হাসিনা" এর মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নির্ভরযোগ্য মাধ্যমগুলো বার্তাসংস্থা আইএনএস-কে জানিয়েছে, পেকুয়ায় নির্মিতব্য টার্মিনালটির কাজ করছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পিটিআই। এই প্রকল্পের সার্বিক ব্যয় দশ হাজার তিন'শ কোটি ডলার। সম্প্রতি বাংলাদেশকে টাইপ-22 মিসাইল বোট দেয়ার ইচ্ছাও জানিয়েছে চীন। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করতে চীন বাংলাদেশকে অত্যাধুনিক দুটি সাবমেরিন দিয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১ তম দেশ হিসেবে সাবমেরিনের যুগে প্রবেশ করে।
বলাবাহুল্য যে, বাংলাদেশের সাবমেরিনের যুগে প্রবেশ ভারত বেশ কড়া চোখেই দেখেছিল এবং এটিকে তাদের হুমকি স্বরূপ মনে করেছিল, যা তৎকালীন ভারতীয় মিডিয়ার খবরে ফুটে উঠেছিল।
বাংলাদেশে ভারতের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব ব্যাপক হলেও বর্তমানে বিশ্লেষকরা প্রভাব বিস্তারের খেলায় কে এগিয়ে থাকবে সেই প্রশ্নে বাণিজ্যিক শক্তিমত্তাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।
দুই দেশেরই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। চীন বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৬ থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে মাত্র ৭৫ কোটি ডলারের পণ্য। আর সাহায্য হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতি বছর চীন দেয় একশো কোটি ডলার। তবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে শি জিন পিং ২৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অপরদিকে ভারত বাংলাদেশে প্রতিবছর আট বিলিয়ন ডলারে পণ্য রপ্তানি করে, বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে মাত্র ২৬ কোটি ডলারের পণ্য। তবে দুই দেশের মাঝে দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলারের অবৈধ বাণিজ্য হয়, যা থেকে ভারতই বেশি লাভবান হয়। এছাড়াও আছে বাংলাদেশে কর্মরত কর ফাঁকি দেয়া বিপুল পরিমাণ কর্মীর আয় ভারতে পাঠানো। ভারত বাংলাদেশকে বছরে পনের কোটি ডলার সাহায্য প্রদান করে।
তথ্যসূত্র: ১- অস্ট্রেলিয়ান গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ইস্ট এশিয়া ফোরামে'র প্রকাশিত নিবন্ধ "চায়না এন্ড ইন্ডিয়া'স জিওপলিটিক্যাল টাগ অব ওয়ার ফর বাংলাদেশ"।
২- নিউইয়র্ক ভিত্তিক 'ওয়ার্ল্ড পলিসি রিভিউ' এরপ্রকাশিত নিবন্ধ "হোয়াই ইন্ডিয়া এন্ড চায়না আর কম্পিটিং ফর বেটার টাইস উইথ বাংলাদেশ।"