বাঙালিরা দেওয়ার চেয়ে নেওয়ায় পটু,যোগ্যতার তুলনায় চায় বেশি•••
আমরা প্রতিদিন দেশের বেকারত্ব,চাকরী সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনায় মুখে ফেনা তুলি,কখনো নিজেদের অবস্থান যাচাই করি না।
আমাদের দক্ষতা ও প্রত্যাশা
সফল ব্যক্তিগণ সর্বদাই বলে থাকেন,দক্ষতা অর্জন কর,যা কখনো বৃথা যায় না।দক্ষ ব্যক্তি কখনো বেকার থাকে না•••
এটি বোঝা যাবে বাংলাদেশের সার্বিক কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে একটু ধারণা নিলেই।
কিছুদিন পূর্বে ঢাকার কালৈয়াকরে হাইটেক পার্ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।তাঁর আগমন উপলক্ষে সেখানে দশ হাজার মানুষকে চাকরী দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়,যা বিভিন্ন কোম্পানির শূন্যপদের ভিত্তিতে গঠিত হয়।এই দশ হাজার কর্মসংস্থানের জন্য আবেদন করেন ত্রিশ হাজার ব্যক্তি।যথাসময়ে চাকরীর সাক্ষাৎকার শুরু হল।সাক্ষাৎকার শেষে নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা দাড়ালো মাত্র••••••17 জন!
9,983 টি পদ খালি থেকে গেল! মিডিয়া এমন বিস্ময়কর ঘটনার হেতু জানতে চাইলো কোম্পানিগুলোর নিকট•••
কোম্পানিগুলোর জবাবের সারমর্ম হল,"আমরা এমন যোগ্য লোক পাইনি যারা আমাদের কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে;যাদের যোগ্য হিসেবে পেয়েছি,তাদের নিয়েছি।আমরা তো এখানে লোক নিতেই এসেছি,না নেয়ার কোন কারণ নেই•••"
অপরদিকে আরেকটি জরিপে দেখা যায়,বাংলাদেশের মিড ক্লাস চাকরীর আশি ভাগ দখল করে আছে বিদেশিরা,যাদের অধিকাংশই শ্রীলঙ্কান/ভারতীয়•••
গার্মেন্টস সেক্টর সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে কিংবা যারা কাজ করে,তাদের জিজ্ঞাসা করবেন,আপনার বস কোথাকার?কোন দেশি?
দেখবেন অধিকাংশের উত্তর হবে হয় শ্রীলঙ্কান,নয়তো ইন্ডিয়ান•••
এর কারণ কি?এসব পজিশনে বাঙালিরা কেন যেতে পারে না?
ব্যবসায়ীদের মত হলো,বাঙালিরা একটা কোম্পানি পরিচালনা করার মত দক্ষ নয়,খুব কম বাঙালিই দক্ষ হয়ে থাকে,আর তাদের সংখ্যা হল মাত্র বিশ ভাগ•••
বিদেশিদের গ্রহণযোগ্যতার অন্যতম কারণ হল,তারা এতই দক্ষ যে,আগামী এক বছর সে এই কোম্পানির মাধ্যমে কত টাকা আয়-ব্যয় করবে তার সম্পূর্ণ একটা হিসাব বসকে তৎক্ষণাৎ দিতে পারে এবং রাত দিন পরিশ্রম করে সে সেই টার্গেট অর্জন করে,যা বঙালিরা খুব কমই পারে•••
অপর জরিপে দেখা যায়,বাংলাদেশ থেকে এসব বিদেশিদের ছয় জন যে পরিমাণ অর্থ নিয়ে যায়,সেই পজিশনে বাংলাদেশের এক হাজার জন কর্মী মিলে তা আয় করে•••
এখন ভেবে দেখুন,আমাদের দক্ষতা আর যোগ্যতার অবস্থান কোথায়•••
আর এসব জরিপ/কথা যে মিথ্যা বা বানোয়াট নয়,তা আপনি বুঝতে পারবেন বিভিন্ন শিল্প কারখানার মালিকদের সাথে কথা বললেই•••
আমাদের এই অযোগ্যতার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে একজন বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদের আক্ষেপ•••"যেসব ছেলেরা পরীক্ষার আগেরদিন বই ভাড়া করে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়,তারা কতটা দক্ষ হতে পারে?তারা কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান,সংগঠন,দলের দক্ষ পরিচালক হতে পারে?
এক রাত পড়েই ভাল সিজিপএ নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে কর্মক্ষেত্রে ঢুকছে,ঢোকার পরেই তাদের যোগ্যতার হালচাল প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে•••
সারা বছর পড়ুয়া আর এক রাতের পড়ুয়া ছেলের সিজিপিএ এক হলেও দক্ষতা কখনো এক হবে না"
আর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তো আক্ষেপ রয়েছে অনেকেরই,আমরা কেন বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বিসিএসের জন্য দৌঁড়াই,তা তো আমার কাজ নয়,সবাই যদি বিসিএস টার্গেট করে,ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,সমাজের প্রতিনিধি কারা হবে?ইত্যাদি ইত্যাদি•••
হ্যাঁ,এই কথার সাথেই সামঞ্জস্য রেখে বলতে চাই,চাকরী পেতে চাইলে আগে কোন সেক্টরে প্রতিযোগী কম এবং সহজলভ্যতা রয়েছে তা বিচার করে টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে•••
আর এমন একটি সেক্টর হল আইটি সেক্টর।আমাদের দেশে এই সেক্টরে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে এবং হতেই থাকবে,যার বর্তমান যোগান পরিপূর্ণ হচ্ছে বিদেশিদের দ্বারা।এই স্যাক্টর টার্গেট করার অন্যতম কারণ হল ভবিষ্যৎ তৈরি হবে আইটির ওপর,এবং ইতোমধ্যেই চাকরীর হাজারো পদ খালি করে দিচ্ছে প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়ন।
গবেষকদের মতে 2030 সাল নাগাদ বিশ্বে বর্তমান কাজের আশি ভাগ চলে যাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে•••
সুতরাং কর্মক্ষেত্রের সংকোচনের ফলে আমাদেরকে বর্তমানের তুলনায় দশ গুণ বেশি প্রতিযোগিতা করতে হবে চাকরীর জন্য,আর সেই প্রতিযোগীতা অনেকাংশে সহজ হবে যদি আমরা প্রযুক্তিতে দক্ষ হই,অন্যথা ভাতে মরতে হবে•••
বর্তমানে শিক্ষিত-মূর্খ সবাই একটা কথা আওড়ায়•••"ধনী দিন দিন ধনীই হতে থাকবে,আর গরীব গরীবই হতে থাকবে"
অনেকেরই ধারণা নেই এটা কেন হচ্ছে বা হতে থাকবে।এর কিছু প্রধান কারণ রয়েছে,যা নিয়ে অন্যদিন আলোচনা করব;কিন্তু কথাটি যে সত্য তা উপর্যুক্ত আলোচনায় আঁচ করতে পেরেছেন নিশ্চয়•••
0 comments:
Post a Comment
Please do not enter any spam link in the comment box.